ডেস্ক নিউজ:
সীমান্তে হঠাৎ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের প্রেক্ষাপটে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানোর পর প্রায় এক দিন পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি এখনও থমথমে।

সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টায় বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম পয়েন্টে পতাকা বৈঠক শুরু হয়েছে।

মঞ্জুরুল হাসান বলেন, “গতকাল সকালে মিয়ানমার সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা আজ সময় দিয়েছে।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, বিজিবিকে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে; নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তে টহলে বিজিবি সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্তে টহলে বিজিবি সদস্যরা রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নিয়ে আছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে বলে বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবির ভাষ্য।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ তুমব্রু সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করে মিয়ানমার। বেশ কিছু সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যক বিজিপি সদস্য অবস্থান নেয় শূন্য রেখা থেকে দেড়শ গজ ভেতরে। ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বিজিপি সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়। তারা মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ক্যাম্পে হামলারও চেষ্টা চালায়।

দুপুরের পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির অবস্থান জোরদার করা হলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ভারী অস্ত্র-শস্ত্র সরিয়ে নেয় বলে জানান তিনি।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লিউন উকে তলব করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেখানে। এরপরও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে গুলির ঘটনা ঘটে।

বিজিবি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, সীমান্তের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিপরীতে মিয়ানমারের সীমানার ভেতর থেকে পরপর দুইবার গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ হই চই শুরু হয়। অবশ্য গুলির ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

সীমান্তের ওপারে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সীমান্তের ওপারে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ওই ক্যাম্পের একটি ব্লকের প্রতিনিধি দিল মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত ৮টার দিকে মিয়ানমারের বিজিপির একটি দল কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ক্যাম্প ঢোকার চেষ্টা করে। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দা-ছোরা আর লাঠি-সোঁটা নিয়ে এগিয়ে গেলে তারা ফিরে যায়। এর পরপরই সীমান্তের ওপার থেকে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়।
“গুলির ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্প লক্ষ্য করে মিয়ানমারের দিক থেকে থেমে থেমে ঢিল ছোড়া হচ্ছে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিনিধি আরিফ বলেন, “রোহিঙ্গারা এখন না পারছে বাংলাদেশে ঢুকতে, না পারছে মিয়ানমার ফিরতে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের।”

সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, “বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সেনা সমাবেশ- এগুলো বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিজিবি সব সময়ই দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।”
—সূত্রঢ় বিডি নিউজ